দেশে ব্লু হোয়েলের 'অস্তিত্ব' নেই

দেশে ব্লু হোয়েলের 'অস্তিত্ব' নেই

দেশে ব্লু হোয়েলের 'অস্তিত্ব' নেই

প্রকাশঃ ১০:৪৫ অপরাহ্ন, অক্টোবর ৯, ২০১৭



গর্বিত কবিরাজ হাট ঃ কনটেন্ট কাউন্সিলর : দেশে মরণঘাতী গেইম ব্লু হোয়েলের ‘অস্তিত্ব’ নেই বলে বলছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় গেইম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তারা গেইমটির বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক আছেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণে দেশে গেইমটির এখনো কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন।

দেশে মোবাইল গেইম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাইজআপ ল্যাবের প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক টেকশহরডটকমকে বলেন, আমরা দেশে এখনো ব্লু হোয়েল গেইমের কোনো ‘অস্তিত্ব’ পাইনি। সাধারণ উপায়ে গুগল প্লে স্টোর, অ্যাপস্টোরে গেইমটি পাওয়া যায় না, এটি আসলে ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়। তবে আমাদের ধারণা এবং পর্যবেক্ষণ থেকে এটা বলতে পারি দেশে এর অস্তিত্ব নেই।

তিনি বলেন, দেশে ব্লু হোয়েল গেইমটি নিয়ে সম্প্রতি খুবই আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে অনেকেই বিষয়টি না জেনেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গণমাধ্যমে যেভাবে গেইমটি নিয়ে খবর ছড়াচ্ছে তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে। অনেক কিশোর এখন গেইমটির প্রতি আসক্তও হয়ে গেইমটি খুঁজতেও পারে।

আরো পড়ুন: দেশে ব্লু হোয়েলের খোঁজ করতে বিটিআরসিকে নির্দেশনা



আরো পড়ুন: ভুয়া ম্যাসেজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ব্লু হোয়েল, সতকর্তা জরুরি

ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি ফোন নম্বর যুক্ত করে সতর্কবার্তা হিসেবে বিভিন্ন বার্তা অেনকেই ইনবক্স বা পোস্ট করেছেন। সেগুলোও ভুয়া বার্তা। সেগুলো সম্পর্কেও সতর্ক হতে হবে বলে অনেকেই বলছেন।

দেশে আরেক গেইম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আবির বলেন, আমি বেশ কয়েকজন কিশোর-তরুণের সঙ্গে গত কয়েকদিন কথা বলেছি। তারা অনেকেই এখনো গেইমটি সম্পর্কে জানেই না। আসলে আমাদের দেশে গেইমটির ‘অস্তিত্ব’ নেই।

তিনি বলেন, যেভাবে ব্লু হোয়েল নিয়ে প্যানিক তৈরি করা হচ্ছে তাতে আমাদের কিশোরদের সঙ্গে গেইমটির পরিচয় করে দেওয়া হচ্ছে। যা আসলেই ক্ষতির মুখেই ফেলবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার টেকশহরডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে ব্লু হোয়েলের কোনো ‘অস্তিত্ব’ নেই এটা বলাটা কঠিন। কারণ ইন্টারনেটে বিশ্বে যেখানে যা পাওয়া যায় বাংলাদেশেও সেগুলো পাওয়া যায়। তাই যদি গেইমটি থেকে থাকেও তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বেসিস সভাপতি বলেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হলে এমন মরণঘাতী গেইম থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে সচেতনতা মানে একেবারে বাচ্চাদের ইন্টারনটে ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া নয়। আর বিষয়টিতে ‘নিষিদ্ধ’ কোনোকিছু হিসেবে না দেখে সচেতনতার সঙ্গে দেখতে হবে। কারণ নিষিদ্ধ জিনিসে আগ্রহী হয়। https://mobile.facebook.com/alamgir.rahman.9847

এজন্য সর্বস্তরে সতর্কতা জরুরি জানিয়ে প্রবীণ এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সবেচেয়ে বেশি পরিবারের সতর্কতা জরুরি। দেশে যেকোনো ভাবেই হোক গেইমটি যেনো ছড়াতে না পারে সেদিকে নজর দেওয়ারও আহবান জানান তিনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে এক কিশোরীর ‘আত্মহত্যার’ ঘটনার পরই দেশে ব্লু হোয়েল গেইমের কথা উঠে আসে। ওই কিশোরীর মৃত্যু ব্লু হোয়েলের কারণে হয়েছে বলে তার বাবা-মা গণমাধ্যমকে জানানোর পর ফেইসবুক, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন জায়গায় একটি সতর্কবার্তা ছড়িয়ে পড়া শুরু করে।

তবে পুলিশ কিশোরী অপূর্বা বর্ধন যে ব্লু হোয়েলের কারণে ‘আত্মহত্যা’ করেছে এমন কোনো প্রমাণ এখনো পায়নি। বরং তাদের সুরতহাল প্রতিবেদনে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও জানায়। যেটা ব্লু হোয়েল গেইমে অনেকটাই বাধ্যতামূলক থাকে।

বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সময় নিউজের বরাতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম দেশে দুজন ব্লু হোয়েল গেইমে আসক্ত বলে তিনি দাবি করেছেন।

তার দেওয়া ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখে ব্লু হোয়েল গেইমে ‘আসক্ত’ এমন ধারণা থেকে দুইজন অভিভাবক তাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠান। এর মধ্যে এক কিশোরের হাতে আঁকা ছবি দেখে তা ‘ব্লু হোয়েল’ আসক্তদের উপসর্গের সঙ্গে মিলে গেছে। তার বড় ভাই তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

তবে অপর কিশোর চিকিৎসকের কাছে যেতে অপারগতা জানিয়েছে বলেও জানান তাজুল ইসলাম। তবে বিষয়টি একেবারেই আমাদের সূত্র দ্বারা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর সেই থেকেই বলা হচ্ছে দেশেও ব্লু হোয়েল গেইমে আসক্ত রয়েছে। তবে বিষয়টি একেবারে স্বাধীনভাবে বিচার করা সম্ভব হয়নি।

ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্লু হোয়েল গেইমটি ২০১৩ সালে রাশিয়ায় তৈরি হয়। ফিলিপ বুদেকিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত মানসিক বিকারগ্রস্ত মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী গেইমটি তৈরি করেছে বলে দাবি করেন।

পরে দেশটিতে বেশিকিছু আত্মহত্যার ঘটনার পর বিষয়টি সামনে আসলে বুদেকিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকেই বিশ্বব্যাপী গেইমটি ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপে গেইমটির কারণে কয়েকশ তরুণ আত্মহত্যা করেছে বলেও জানায় বিভিন্ন গণমাধ্যম।
https://mobile.facebook.com/alamgir.rahman.9847