হাজী রমিজউদ্দিন মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্ডেন এন্ড স্কুল .

হাজী রমিজউদ্দিন মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্ডেন এন্ড স্কুল .
হাজী রমিজউদ্দিন মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্ডেন এন্ড স্কুল .
papry99.blogspot.com
=======================

হাজী রমিজউদ্দিন মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্ডেন এন্ড স্কুল .
কবিরাজহাটে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান 


কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি
কবে, কীভাবে চালু হয়?

কিন্ডারগার্টেন এখনকার জনপ্রিয় শিক্ষা পদ্ধতি। 
প্রাইমারি পর্যায়ের এ প্রতিষ্ঠানে
হয় শিশুদের হাতেখড়ি। সরকারি প্রাইমারি
স্কুলে যেসব শিশু পড়ে না, তাদের
কাছে এটি বেশি জনপ্রিয়।
এ শিক্ষা পদ্ধতির পেছনে বড় ভূমিকা
রেখেছিল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব।
শিশুশ্রম এসময় বন্ধ হয়ে যায়। কারখানায়
কর্মরত শ্রমিকদের সন্তানের জন্য
স্কটল্যান্ডের ল্যানার্কে একটি স্কুল
প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১৬ সালে। রবার্ট ওয়েন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা।
শিশুদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে
তাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বারোপ করা
হতো এ স্কুলে। ১৮৩৮ সালে
সুইজারল্যান্ডের পেস্টালোজা উন্নত
পদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের
জন্য হোম অ্যান্ড কলোনিয়াল স্কুল
সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে খেলার মাধ্যমে শিশুদের মানসিক
প্রশিক্ষণের জন্য জার্মানির এফ
ফোবেল ক্লাঙ্কেনবার্গে একটি স্কুল
খোলেন। তিনি এর নাম দেন
কিন্ডারগার্টেন। পরবর্তীতে এ শিক্ষা
পদ্ধতি বিশ্বের বহুদেশে চালু হয়।
papry99.blogspot.com





সুন্দর ইসলামী গল্প

সুন্দর ইসলামী গল্প
সুন্দর ইসলামী গল্প
****************
বিয়ের একমাস পর বৌ-শাশুড়ির কথোপকথন:
→বউমা, আমি ২৮টি বছরে যা পারিনি
তুমি এক মাসেই তা করে ফেলেছ।
→আম্মু,আপনি এ কী বলছেন!
→হ্যাঁ মা,, আমি এই ২৮টি বছরে ছেলেকে ফজর নামাজে অভ্যস্ত করতে পারিনি।
তুমি এক মাসেই পেরেছ!
→আম্মু, আপনি কি পাথর আর স্বর্ণের গল্পটা জানেন?
→না তো!
→কোন এক গ্রামে চলাচলের পথে একটি বড় পাথর প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। এক ব্যক্তি রাস্তা পরিস্কার করতে মনস্থ করল। সে একটি কুড়াল নিয়ে পাথরটি ভাঙার চেষ্টা করল। ৯৯টি আঘাত করে সে ক্লান্ত হয়ে গেল। তখনই সেখান দিয়ে এক পথিক যাচ্ছিল। লোকটি পথিকের সাহায্য চাইলো। পথিক কুড়াল নিয়ে আঘাত করতেই পাথরটি ভেঙে গেল এবং ভেতর থেকে স্বর্ণভর্তি একটি থলে বেরিয়ে এল।
-পথিক: যেহেতু পাথরটি আমার আঘাতে ভেঙেছে, তাই থলেটি আমার।
-আমাকেও কিছু দাও।আমিও যে ৯৯টি আঘাত করলাম।
পথিক রাজি হল না। দুজনে কাজীর কাছে গেল। সব শোনে কাজী মীমাংসা করলেন। স্বর্ণগুলোকে ১০০ভাগ করে ১ভাগ দিলেন পথিককে, বাকি ৯৯ভাগ লোকটিকে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, "যদি তোমার ৯৯টি আঘাত না হত তাহলে এই পাথরটি ভাঙতোই না"।
-আম্মু,আপনি ২৮টি বছর পরিশ্রম করে সবকিছু প্রস্তুত করেছেন। আমি শুধু শেষ আঘাতটাই করেছি।
বউ-শাশুরীর সম্পর্কগুলো এরকম মধুর হলে কোন পরিবারেই অশান্তি থাকতো না।আল্লাহ সবাই কে বুঝার ক্ষমতা দান করুন আমিন

কিশোরী ও বুদ্ধিমতী মা

কিশোরী ও বুদ্ধিমতী মা
গল্প : 
“কিশোরী ও বুদ্ধিমতী মা” 
যেভাবে আপনার মেয়েকে পর্দার গুরুত্ব বুঝাবেন!
..........................................................

প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর এক কিশোরী। নবম শ্রেণীতে পড়ে। পড়াশুনায় যেমন মেধাবী তেমনি দুষ্টুমিতেও কম যায়না। বাড়ির সবাইকে দুষ্টুমিতে মাতিয়ে রাখে। প্রাকৃতিক নিয়মেই হঠাৎ করে তার শারীরিক পরিবর্তন শুরু হতে লাগল। ঠিকরে বেরুতে লাগল সৌন্দর্য।
প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করত। সাথে থাকত তার প্রতিবেশী কয়েকটি মেয়ে। একসাথে গল্প করতে করতে বাসায় ফিরত। প্রতিদিনের মত সে স্কুল থেকে ফিরছিল। কিন্তু আজ তার সাথে কেউ ছিলনা। রাস্তার পাশে এক ছেলে এসময় দাঁড়িয়ে থাকতো কিন্তু কিছু বলত না। আজ তাকে একা আসতে দেখে ছেলেটি তার কাছে এসে বলল – তুমি না অনেক সুন্দর! তোমাকে আমার অনেক ভাল লাগে। একথা বলে ছেলেটি দ্রুত চলে যায়। সুমাইয়া হঠাৎ একথা শুনে একটু থমকে দাড়ায়। কিছু বুঝতে পারেনা। একসময় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে স্কুল ব্যাগ রেখে ড্রেস পরিবর্তন না করেই আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল।
সুমাইয়ার মা ব্যাপারটি লক্ষ্য করলেন। ভাবলেন মেয়েতো কখনও এরকম করেনা। তাই তিনি মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
– মামনি, কি ব্যাপার ? কিছু হয়েছে ?
– আচ্ছা আম্মু, আমি কি দেখতে অনেক সুন্দর?
মেয়ের এ কথায় মা একটু থমকে গেলেন। ভাল করে মেয়ের দিকে তাকালেন। সত্যিই মেয়ে যে দিনে দিনে এত সুন্দর হয়ে উঠছে তা তো অত ভাল করে খেয়াল করা হয়নি।
– একথা কেন মামনি ?
– আজ স্কুল থেকে আসার পথে এক ছেলে আমাকে বলে আমি নাকি অনেক সুন্দর !
– ও আচ্ছা এই কথা !
– বলনা আম্মু !!
– হুম তুমিতো অনেক সুন্দর হয়ে যাচ্ছ দিনে দিনে !! আচ্ছা এখন তুমি তাড়াতাড়ি পোষাক পরিবর্তন কর আর গোছল করে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রেষ্ট নাও। বিকালে তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাব। তোমার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনব।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
বিকেলে মার্কেট থেকে মেয়ের পছন্দমত থ্রী পিছ কিনে দিলেন। বাসায় এসে মেয়েকে নতুন জামা পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলেন। আর মেয়েকে বললেন যাও তোমার আব্বুকে দেখিয়ে আস তোমাকে কেমন সুন্দর লাগছে। নতুন জামা পরে খুব খুশিমনে আব্বুর কাছে গিয়ে সালাম করল। আর বলল –
– আব্বু দেখতো আমাকে কেমন লাগছে ?
– সুবহানাল্লাহ ! তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। এত সুন্দর করে তোমাকে কে সাজিয়ে দিল ?
– মামনি।
তার বাবা মানিব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশত টাকার নোট বের বরে মেয়ের হাতে দিয়ে বললেন –
– পাঁচশত টাকা হল তোমার সালামী আর পাঁচশত টাকা হল তোমাকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়ার জন্য তোমার আম্মুকে আমার তরফ থেকে বকশীশ।
মেয়ে খুশি মনে টাকা নিয়ে আম্মুর কাছে গেল। আম্মুকে টাকা দিল। আম্মু মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। তারপর পাশে বসিয়ে বললেন –
– তোমাকে যদি কেউ কিছু উপহার দেয় তাহলে তুমি সেটা কি কর ?
– যত্ন করে রেখে দিই।
– আচ্ছা, আল্লাহ তাআলা আমাদের মানুষকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। তোমাকে এত সৌন্দর্য দান করেছেন। এটা কি তোমাকে আল্লাহর তরফ থেকে দেয়া উপহার না ?
– হ্যাঁ 
– তাহলে এই উপহার যত্ন করে রাখা দরকার না ?
– হ্যাঁ অবশ্যই 
– বলতো কিভাবে যত্ন করে রাখবে ?
– কিভাবে আবার ! চেহারার যত্ন নিব, রোদে যাবনা, ধূলাবালি থেকে দূরে থাকব, স্নো ব্যবহার করব।
– হুম। আর কি করবে ?
– আর কি ?
– শোন মামনি, আল্লাহ তাআলা যেমন মানুষকে সৌন্দর্য দান করেছেন, ঠিক তেমনি সৌন্দর্য রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ও কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন – 'আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।'
(সূরা আন-নূর:৩১)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন – 'হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
(সূরা আহযাব-৫৯)
'যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কন্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।'
(সূরা আহযাব-৩২)
– এই যে, আল্লাহ তাআলা কতগুলো নির্দেশ দিয়েছেন এগুলো মেনে চলাকে বলা হয় পর্দা করা। আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এগুলো অনুসরণীয়।
– তাহলে তো আমাকে পর্দা পালন করতেই হবে আম্মু?
– হুম, নিশ্চিন্ত জীবন যাপনের জন্য তোমাকে তা পালন করতেই হবে। তাতেই আসবে জীবনের সফলতা। 
– আম্মু, আজ থেকে আমি পর্দা করা শুরু করে দেব।
– আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

বীরগঞ্জে এসএসসি ফরম পুরনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ

বীরগঞ্জে এসএসসি ফরম পুরনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের
প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ
বীরগঞ্জে এসএসসি ফরম পুরনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের
প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ
papry99.blogspot.com


॥ বীরগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার এসএসসি ফরম পুরনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের সনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব ওবাইদুল হক সরকারী বিধি মালা ও শিক্ষা বোর্ডের প্রদত্ত পত্রের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিটি শিক্ষার্থী’র কাছে অতিরিক্ত ১০০০/-দাবী করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

 

অনেক শিক্ষার্থী ও সচ্ছল অভিভাক অতিরিক্ত ফি দিয়ে ফরম পুরন করলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীও অভিভাক ফরম পুরনে অংশ গ্রহন করতে পারছে না বা তাদের ফরম পুরনের সুযোগ দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে নিরম্নপায় দরিদ্র শিক্ষার্থী ও অভিভাকের গত বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

 

সংবাদ পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক ওবাইদুল হকের সাথে সাক্ষাত করা হলে জানান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিজ ও সাধারন সম্পাদক বিপুল চন্দ্র রায়ের প্রদত্ত পত্রের নিদের্শ মোতাবেক অতিরিক্ত ১০০০/- টাকা আদায় করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ৯৪জন পরীক্ষার্থী মধ্যে ইতি মধ্যে ৩০জন শিক্ষার্থী ফরম পুরন করেছে।

 

শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে কি না জনতে চাইলে তিনি জানান তা ভবিষতে দেখা যাবে। বিদ্যালয়ে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে ফরম পুরনে টাকা আদায়ের স্বাক্ষরিত নিদের্শিত পত্র মোতাবেক আদায় করা হচ্ছে। আমি পত্রের নিদের্শের বাইরে কোন অতিরিক্ত টাকা আদায় করছি না।

 

শিক্ষার্থী অভিভাবক মন্মথ চন্দ্র রায়, আজগর আলী, এমদাদুল হক, জবায়দুল ইসলাম, ফজির উদ্দিন, আজিজার রহমান, আসগর আলী-২, মোস্তফা কামাল, মিজানুর রহমান, ইসরাইল হোসেন, মনিরুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আবু সাইদ, মারু মিয়া, মোজাম্মেল হক ও হাকিমুল ইসলাম সহ

 

অর্ধশত শিক্ষার্থী অভিভাবক অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে দেয়া ও  সরকার নিদের্শ মোতাবেক ফরম পুরনের দাবি জানান এবং সরকারী আইন অমান্যকারী প্রধান শিক্ষক ওবাইদুল হকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
https//:papry99.blogspot.com

প্রসঙ্গ : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে তিনবার - এক কূটনীতিকের স্মৃতিচারন। https://papry99.blogspot.com

প্রসঙ্গ : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে তিনবার - এক কূটনীতিকের স্মৃতিচারন।
https://papry99.blogspot.com
প্রসঙ্গ : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে তিনবার - এক কূটনীতিকের স্মৃতিচারন।
https://papry99.blogspot.com
______________________________
 

শহীদ জিয়াউর রহমান যখন প্রেসিডেন্ট, তখন আমার পোস্টিং ছিল বিদেশে। প্রথমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে, পরে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাসে। বিদেশে থাকা অবস্থাতেই তার সাথে তিনবার সাক্ষাতের সৌভাগ্য আমার হয়। প্রথম সাক্ষাৎটি হয় ১৯৭৭ সালে, লন্ডলে। তিনি সেবার কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডন এসেছিলেন। দ্বিতীয় সাক্ষাৎও লন্ডনে, ১৯৭৯ সালে, হাভানায় জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার পথে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতিকালে। শেষবার তার দেখা পাই ১৯৮০ সালে বেলগ্রেডে। যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট টিটোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। https://papry99.blogspot.com

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর শহীদ জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কথা শুধু বাংলাদেশীরা নয়, বরং বিশ্বের সব স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষই সর্বদা স্মরণ করবে। আমার স্মৃতিতে এখনো ভাস্বর হয়ে আছে সেসব মুহূর্তের কথা, যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও বেসামরিক মানুষের ওপর নিষ্ঠুরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনারা আর গোটা জাতি অপেক্ষা করছিল যথোপযুক্ত নির্দেশনার। সেই দিশেহারা মুহূর্তে ইথারে ভেসে আসে মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর। 

চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর একটি রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার জিয়া সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপিত একটি অস্থায়ী বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করে। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার চেতনায় তারা নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হয়। মার্চের ঝোড়ো দিনগুলোতে আমি সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসের (সিএসএস) মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। কিন্তু ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ দেখে এবং মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে আমি তাৎক্ষণিকভাবে মনস্থির করে ফেললাম, পাকিস্তান সরকারের চাকরি আমি কখনোই করব না, বরং মুক্তিযুদ্ধে চলে যাবো। তাতে যদি জীবনও যায় তো যাক।

প্রথম সান্নিধ্য : অনেক ঝুঁকি নিয়ে, বিপদ এড়িয়ে অবশেষে একদিন আমি পৌঁছে গেলাম মুজিবনগর। প্রবেশনার হিসেবে যোগ দিলাম প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় সেখানেই নিয়োজিত ছিলাম। শহীদ জিয়া ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ‘জেড’ ফোর্সের কমান্ডিং অফিসার। কিন্তু এ সময় তার সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ আমার হয়নি। তার সাথে আমার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় ১৯৭৭ সালে লন্ডনে। সেবার তিনি কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে এসেছিলেন। আমি ছিলাম লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব ও হেড অব চ্যানসারি। ওই সময় হাইকমিশনার ছিলেন এ এফ এম আবদুল ফাতেহ। এ ছাড়া ছিলেন আবুল আহসান (ডেপুটি হাইকমিশনার), ইনাম আহমেদ চৌধুরী (ইকনোমিক মিনিস্টার), মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (মিনিস্টার কনসুলার) ও এম আর ওসমানী (পলিটিক্যাল কাউন্সিলর)। https://papry99.blogspot.com

প্রেসিডেন্ট আসছেন তাই প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা নেয়া হলো। প্রেসিডেন্টের থাকার ব্যবস্থা হলো শেরাটন হোটেলে। হোটেলটি হাইকমিশনের কাছেই; ২৮ কুইন্স গেট, লন্ডন এসডাব্লিউ-৭ এলাকায়। প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর শামস-উল হক, পররাষ্ট্র সচিব তোবারক হোসেন, প্রিন্সিপ্যাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনালে নুরুল ইসলাম, ডাইরেক্টর জেনারেল এম মহসিন ও প্রাইভেট সেক্রেটারি কর্নেল অলি আহমদ।

প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীরা এলেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। এয়ারপোর্টে হাইকমিশনার তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। সাথে আমরা হাইকমিশনের অন্যরা প্রায় সবাই ছিলাম। ব্রিটেনের ফরেইন অফিস, কমনওয়েলথ অফিস ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট থেকেও কর্মকর্তারা এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে।
সত্যি বলতে কী, প্রেসিডেন্টের আগমনের দিন গুনছিলাম আমি। ভাবছিলাম, প্রেসিডেন্টকে খুব কাছে থেকে দেখার বিরল একটি সুযোগ এটা। এয়ারপোর্ট অভ্যর্থনার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমরা তাকে নিয়ে যাই অ্যালকক অ্যান্ড ব্রাউন ভিআইপি লাউঞ্জে। সেখানে চা-নাশতা পরিবেশন করা হয়। আমাদের সবাইকে প্রেসিডেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন হাইকমিশনার। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সামনাসামনি ওটাই আমার প্রথম দেখা। দেখলাম, তার পরনে ধূসর রঙের সুট, চোখে সেই চিরসেনা সানগ্লাস। শুরুতে প্রেসিডেন্ট ছিলেন খানিকটা রিজার্ভড। কিন্তু ওই দূরত্ব কাটতে সময় লাগল না। অল্পক্ষণের মধ্যেই খোলামেলা আলাপে পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। প্রেসিডেন্টের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে মুগ্ধ হলাম আমি। তিনি কথা বলছিলেন মৃদুস্বরে এবং আমাদের সম্মান রেখে ও সৌজন্যবোধের সাথে। দু-একটি বিরল ব্যতিক্রম বাদ দিলে এখন রাজনীতিকদের মধ্যে এমন আচরণ দেখাই যায় না। এয়ারপোর্ট থেকে আমরা প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের হোটেলে পৌঁছে দিলাম। সেদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার সিনিয়র সফরসঙ্গীরা হাইকমিশন পরিদর্শনে এলেন। প্রেসিডেন্ট হাইকমিশনের সবার সাথেই কুশল বিনিময় করলেন, এমনকি সাধারণ কর্মচারীদের সাথেও। এ সময় সাংবাদিকদের সাথে ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও (এখন ইত্তেফাক সম্পাদক)। প্রেসিডেন্ট জিয়া তার (মঞ্জু) সাথে হাত মেলানোর সময় বললেন, ‘হাইকমিশনে কবে যোগ দিচ্ছেন?’

প্রেসিডেন্টের এ কথায় একটু যেন অপ্রতিভ হলেন মঞ্জু। কিন্তু মুহূর্ত মাত্র। তার পরই সবার কলহাস্যে সব ভেসে গেল। পরিবেশ আবার উচ্ছ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। প্রেসিডেন্ট জিয়া হাইকমিমনে বেশ কিছু সময় ছিলেন। এ সময় তিনি প্রত্যেককে তার সাথে কথা বলা ও মতবিনিময় করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি লন্ডনে বেশ ক’জন বাংলাদেশী তরুণ পেশাজীবীকেও সাক্ষাৎ দেন। তাদের দেশে ফিরে জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনি তাদের কাছে তার সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির কথা এবং একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য তুলে ধরেন। এ ব্যাপারে আরো কথা বলতে তিনি তাদের বলেন, যেন তারা তার দলের (বিএনপি) মহাসচিব প্রফেসর বি. চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ রাখেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া এ সময় জানান যে, তিনি শিগগিরই বি. চৌধুরীকে লন্ডন পাঠাবেন।
কয়েক মাস পর নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে লন্ডন আসেন বি. চৌধুরী। তিনি তরুণ বাংলাদেশী পেশাজীবীদের সাথে ফলোআপ ডিসকাশনে মিলিত হন। এ সময় তিনি তাদের কয়েকজনকে দেশে ফিরে বিএনপিতে যোগ দিতে রাজি করাতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ওই সফরকালে একটি ঘটনায় তার সাহস ও আত্মবিশ্বাস দেখে আমি অভিভূত হই। https://papry99.blogspot.com

একদিন দিনের কর্মসূচি শেষে প্রেসিডেন্টের গড়িবহর হোটেলে ফিরছিল। এ সময় তার নজরে আসে রাস্তার অপর পাড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে একদল বাংলাদেশী স্লোগান দিচ্ছে। নিরাপত্তাতকর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রেসিডেন্ট জিয়া তার গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। হেঁটে চলে গেলেন বিক্ষোভকারীদের কাছে এবং তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। তিনি তাদের কাছে বিক্ষোভের কারণ এবং তাদের সমস্যা সমাধানে তার কিছু করার আছে কিনা জানতে চাইলেন। তিনি তাদের কথা বলার জন্য হোটেলে আসারও আমন্ত্রণ জানালেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া তাদের একেবারে সামনে চলে আসবেন, এমনটা কল্পনায়ও ছিল না বিক্ষোভকারীদের। প্রেসিডেন্টের সাহসী তৎপরতায় তারা হতভম্ব হয়ে গেল। প্রসঙ্গক্রমে আমি আরো একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। ঘটনাটি ব্রিটিশ রাজকীয় প্রটোকল নিয়ে। কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে আগত রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের সম্মানে বাকিংহাম প্রাসাদে ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন রাণী। ড্রেস কোড : ফর্মাল। অর্থাৎ সবাইকে কালো সুট ও বো টাই পরে যেতে হবে। মেজর জেনারেল (তখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) মইনুল হোসেন চৌধুরী বিষয়টি জানালেন প্রেসিডেন্টকে। শোনামাত্র প্রেসিডেন্ট জিয়া ড্রেস কোডের বিষয়টি নাকচ করে দিলেন।

আমার এখনো মনে আছে, প্রেসিডেন্ট জিয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, আমরা কমনওয়েলথে আছি স্বইচ্ছায়, বাধ্য হয়ে নয়। এই একটি মাত্র কথার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রখর জাতীয়তাবাদী মনোভাবটি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল। ‘কী হয়’ ভেবে সবাই উদ্বিগ্ন ছিলাম। বিষয়টি ফরেইন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসকে জানিয়ে দেয়া হয়। এক দিন পর তারা আমাদের জানান যে, তারা আমাদের প্রেসিডেন্টের এ মনোভাবের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা সাধারণ সুট বা জাতীয় পোশাক পরেই রাণীর ভোজসভায় আসতে পারবেন। আমরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। https://papry99.blogspot.com

দ্বিতীয় সান্নিধ্যে : ১৯৭৯ সালের শেষ দিকের কথা। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যাচ্ছিলেন কিউবার রাজধানী হাভানায়। পথে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি করবেন। ওই সময় ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় (হারিকেন) এন্ড্রু আসি-আসি করছিল। ফলে প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি আর সংক্ষিপ্ত থাকল না, প্রলম্বিত হলো। সেবার তার সাথে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামস-উল হক, পররাষ্ট্র সচিব এস এ এম এস কিবরিয়া (পরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এখন প্রয়াত), চিফ অফ প্রটোকল এম আর ওসমানী প্রমুখ। প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার সফরসঙ্গীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল হিথরো এয়ারপোর্টের কাছেই একটি হোটেলে, যাতে তারা খুব ভোরেই হাভানা রওনা হতে পারেন। কিন্তু আগেই বলেছি, বাদ সাধল ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আবহাওয়া। তাদের যাত্রা বিলম্বিত হলো। 

এ অবস্থায় নবনিযুক্ত হাইকমিশনার এ আর এস দোহা (পরে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী) প্রেসিডেন্টের সম্মানে ওই হোটেলেই এক নৈশভোজের আয়োজন করলেন। অন্যদের সাথে হাইকমিশনের সব অফিসারও নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেখলাম বেশ খোশমেজাজে। তিনি আমাদের সবার সাথে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করলেন। আমাদের জানালেন বিভিন্ন সেক্টরে তার সরকার কী কী কর্মসূচি ও ব্যবস্থা নিয়েছে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে। আমাদের তার সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক লক্ষ্য সন্বন্ধেও জানালেন। বললেন, তিনি চান দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো জোরদার করে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে এবং এর মাধ্যমে গোটা অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার কথা শুনে নিজের দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের আশাবাদ শতগুণ বেড়ে গেল। কথা বলার ফাঁকে প্রেসিডেন্ট হাসতে হাসতে কিবরিয়াকে দেখিয়ে বললেন, আপনাদের ফরেইন সেক্রেটারি চেইন স্মোকার ছিলেন। এখন ধূমপানই ছেড়ে দিয়েছেন। তাহলে দেখুন, কেউ সত্যি সত্যি চাইলে নিজের ও দেশের আলোর জন্য কাজ করতে পারেন। ভালো কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং কাজটা করাই আসল কথা। https://papry99.blogspot.com

প্রেসিডেন্টের যাত্রাবিরতিটি ছিল সংক্ষিপ্ত। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত সময়টাকেও তিনি কাজে লাগাতে চাইলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, বিশ্রাম নয়, বরং এ সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে বৈঠক করবেন। এ সময় প্রেসিডেন্টের সাথে যারা বৈঠক করেন তাদের মধ্যে ছিলেন বার্মিংহামের তাজাম্মুল হক (পরে এরশাদের শাসনামলে প্যারিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত), লন্ডনের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: গিয়াসউদ্দিন মিয়া ও বেশ কিছু তরুণ বাংলাদেশী পেশাজীবী। একের পর এক বৈঠকে রাত গভীর হচ্ছিল। আমরা ভাবতে থাকলাম এই তো, এবারের মিটিংটা শেষ হলেই হলো। প্রেসিডেন্ট ঘুমাতে গেলেই আমরা বাসায় ফিরব, আগামীকাল ভোরে ভোরে চলে আসব। কিন্তু কিসের কী। মিটিং পর্ব যখন শেষ, লন্ডনে তখন ভোর ৩টা। আমরা ভাবলাম, এবার তো শেষ হলো। কিন্তু আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবার তিনি হাইকমিশন পরিদর্শনে যাবেন। কী আর করা, আমরা দ্রুত একটি অ্যাডভান্স টিম পাঠালাম হাইকমিশনে, প্রেসিডেন্টের পরিদর্শনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে। হোটেল থেকে হাইকমিশন এক ঘণ্টার পথ। প্রেসিডেন্ট জিয়া ভোর ৪টায় হাইকমিশনে পৌঁছলেন, পরিদর্শন শেষে ভিজিটরস বুকে স্বাক্ষর দিলেন এবং ভোর ৬টায় হোটেলে ফিরে গেলেন। হোটেলে ফিরেই তিনি আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন সকাল ৭টায় তার সাথে নাশতা করার। নাশতার টেবিলে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেখে আমাদের বিস্ময়ের সীমা রইল না, কী তরতাজা। দীর্ঘ রাত জাগরণের ক্লান্তির চিহ্নমাত্র নেই তার চেহারায়। এদিকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আবহাওয়াও ধীরে ধীরে ভালো হয়ে আসছিল। ফলে ওই দিন দুপুরেই হাভানার উদ্দেশে লন্ডন ছাড়লেন প্রেসিডেন্ট জিয়া ও তার সফরসঙ্গীরা।

তৃতীয় সান্নিধ্যে : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে আমার তৃতীয় ও শেষ দেখা ১৯৮০ সালের মে মাসে, বেলগ্রেডে। যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট টিটোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া বেলগ্রেড এসেছিলেন। আমাকে তখন লন্ডন থেকে বদলি করা হয়েছিল ইয়াঙ্গুনে। বেলগ্রেডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফখরুদ্দীন আহমদ ও তার মিসেস আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইয়াঙ্গুনে যোগদানের আগে ক’টা দিন যেন আমি তাদের সাথে কাটাই। এখানে বলে রাকি, রাষ্ট্রদূত ফখরুদ্দীন ও তার মিসেসই ছিলেন আমাদের বিয়ের ঘটক। আমি ও আমার স্ত্রী জুয়েনাকে তারা অত্যন্ত স্নেহ করতেন। দু’জনের কেউই আর এ পৃথিবীতে নেই, কিন্তু আমাদের মনের গভীরে তারা আছেন। বেলগ্রেডে বাংলাদেশ দূতাবাসটি ছিল ছোট। রাষ্ট্রদূত ছাড়া ওখানে ছিলেন ফার্স্ট সেক্রেটারি কাজী নজরুল ইসলাম (মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগরে আমরা একসাথে কাজ করেছি। ফলে তার সাথেও আমার সম্পর্ক ছিল গভীর)। কিন্তু মাত্র এই দু’জনের পক্ষে প্রেসিডেন্টের সফর সামাল দেয়া ছিল আসলেই কঠিন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার বেলগ্রেড সফর যখন চূড়ান্ত হলো, রাষ্ট্রদূত ফখরুদ্দীন আহমদ আমাকে বললেন, পররাষ্ট্র সচিবের সাথে তার (ফখরুদ্দীন) আলাপ হয়েছে, প্রেসিডেন্টের সফরকালে আমি অফিসিয়ালি অন ডিউটিতে থাকব। এভাবে আমাকে ছুটি কাটানোর কথা ভুলে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সফরের সাথে জড়িয়ে পড়তে হলো। https://papry99.blogspot.com

প্রেসিডেন্ট জিয়ার সফরটি ছিল চার দিনের। কিন্তু মার্শাল টিটোর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান এবং একটি কী দু’টি সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়া সফরটি ছিল ঢিলেঢালা। অন্যান্য বারের মতো সেবারও তার সফরসঙ্গী দলটি ছিল ছোট পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামস-উল হক, চিফ অফ প্রটোকল খায়রুল আনাম, প্রেসিডেন্টের মিলিটারি সেক্রেটারি মেজর জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরী, কয়েকজন সাংবাদিক ও তার সিকিউরিটি টিম। লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হওয়ার আগে বেলগ্রেডে রাষ্ট্রদূত ছিলেন এ আর এস দোহা। তাই তাকেও প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী দলে থাকতে বলা হয়েছিল। সেবারই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে খুব কাছে থেকে দেখার এবং ভালোভাবে জানার সুযোগ পাই আমি। যে হোটেলে প্রেসিডেন্টের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেটি ছিল ড্যানিয়ুব নদীর তীরে। তার রুমে বসেই নদীটির শোভা উপভোগ করা যেত। সেবার তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক ঘটনার কথা শুনি, যা আমার জীবনে একটা বড় অভিজ্ঞতা। তবে নিজেকে আমার সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হয় এ কারণে যে, জিয়াউর হরমানের নিজের মুখ থেকে তার স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি আমি শুনেছি।

ওই দিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের সম্মানে নিজের বাসভবনে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন রাষ্ট্রদূত ফখরুদ্দীন ও মিসেস ফখরুদ্দীন। সেই সন্ধ্যায় আমরা অন্য এক জিয়াউর রহমানকে দেখি যিনি প্রাণবন্ত, রসিক ও স্নেহময় একজন মানুষ। তিনি রাষ্ট্রদূতের পুরো বাড়িটি ঘুরলেন। গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখলেন কিছু ডেকোরেটিভ আইটেম। বাংলাদেশের কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর চিত্রকর্ম দেখে তার প্রশংসা করলেন। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে মহিলাদের পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেয়ার ব্যাপারে ভোজসভায় আগত মহিলাদের সাথে খোলামেলা আলাপ করলেন। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের মানুষের আর্থ - সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রাগ্রসর দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমার স্ত্রী মুগ্ধ হলেন।

যুগোস্লাভ সরকারের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট, তার সফরসঙ্গী দল ও আমাদের সবাইকে কিছু টুরিস্ট স্পট দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এক রেস্টুরেন্টে বসে আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। ওখান থেকেই দূরে পাহাড় ও নদী দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ আমরা প্রেসিডেন্টের গলা শুনতে পেলাম : এবার কিছু জোকস শোনা যাক। তিনি প্রত্যেককে কমপক্ষে একটি করে হলেও জোক বলতে বললেন। তার এ কথায় অনেকেই বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর শামস-উল হক মহাবিপাকে পড়ে গেলেন। তবে পরিস্থিতি সামাল দিলেন মি. দোহা। তিনি একের পর এক জোক বলে যেতে থাকলেন আর চার দিকে হাসির রোল পড়ে গেল। নাসিরউদ্দিন হোজ্জার গল্পগুলো শুনে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জিয়া বেশ মজা পেলেন। মি. দোহা এমনিতেই প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এবার তিনি চলে এলেন লাইমলাইটে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শামস-উল হক পরে আমাদের বলেন, গত আড়াই বছরে তিনি প্রেসিডেন্টকে কাজ ছাড়া আর কিছু করতে দেখেননি। এই প্রথম প্রেসিডেন্টকে ছুটির মেজাজে দেখলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সে সময় কে জানত চট্টগ্রামে নিহত হওয়ার মাত্র এক বছর আগে এটাই ছিল তার শেষ কাজবিহীন অবকাশ যাপন!

লেখক : রফিক আহমেদ খান, সাবেক কূটনীতিক।

সুত্র : দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২৯ মে, ২০১৫।

সংগ্রহ : https://papry99.blogspot.com