শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস গর্বিত কবিরাজহাট ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭ kobirajhat24.net

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

গর্বিত কবিরাজহাট

ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭

kobirajhat24.net
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
গর্বিত কবিরাজহাট
ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
kobirajhat24.net


৪৬ বছর আগে এ দিনে
পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের এ
দেশীয় দোসর রাজাকার,
আলবদর, আলশামস বাহিনী
তালিকা তৈরি করে
পরিকল্পিতভাবে একে একে
হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ
থেকে ১৪ ডিসেম্বর
পর্যন্ত বর্বর পাকিস্তানি হানাদার
এবং তাদের এ দেশীয়
দোসরদের হাতে
নির্মমভাবে শহীদ
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে
প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর এ
দিবসটি বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে
স্মরণ করে থাকে। বিজয়ের
মাত্র দুদিন আগে জাতিকে
মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা
নিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো
হয়। সেই সময় হানাদারদের
হাতে দেশের শ্রেষ্ঠ
সন্তান বুদ্ধিজীবী, কবি,
সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক,
ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশার
খ্যাতনামা ব্যক্তিরা শহীদ হন।
তাদের অন্যতম হচ্ছেন ড.
ফজলে রাব্বি, ড. আলীম
চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার
,মুনীর চৌধুরী, সাংবাদিক
সিরাজুদ্দীন হোসেন,
সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ,
ড. জি সি দেব, জোতির্ময়
গুহঠাকুরতা, ফয়জুল মাহি, লাডু ভাই,
আ.ন.ম গোলাম মোস্তফা,
আর পি সাহা, খন্দকার আবু
তালেব, নূতন চন্দ্র সিংহ,
রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান,
ড. মুক্তাদির, ড.সাদেক, ড.
আমিনুদ্দীনসহ নাম না-জানা
আরো অনেকে।
৭১-এর শহীদদের কাছে
জাতির ঋণ শোধ হওয়ার নয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির
শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাঙালি জাতির
মানসগঠনকে তারা পুষ্ট
করেছেন। তারা জাতীয়
জাগরণ স্বাধীন বাংলাদেশের
ভিত্তিভূমি নির্মাণ করেছেন।
শিক্ষা, সাহিত্য ও সংগীত,
চিত্রকলা ও সাংস্কৃতিক
কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা
বাঙালির রেনেসাঁর পর্বটি
সম্পন্ন করেছেন।
তারা গণতন্ত্র, বাঙালি
জাতীয়তাবাদ, অসামপ্রদায়িক
চেতনা ও শোষণমুক্ত
স্বদেশের যে ছবি
এঁকেছেন তা-ই পথ
দেখিয়েছে আমাদের।
সেই আদর্শে প্রাণ
দিয়েছেন লক্ষ লক্ষ
শহীদ। জয়যুক্ত হয়েছে
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও
সংরক্ষণ হয়নি দেশের
সবগুলো বধ্যভূমি ও গণকবর।
সমগ্র দেশে ছড়িয়ে থাকা
অসংখ্য বধ্যভূমি এবং গণকবর
এখনও শনাক্ত হয়নি।
প্রশাসনের উদাসীনতায়,
অযত্ন আর অবেহলায়
অরক্ষিত হয়ে পড়েছে
বধ্যভূমি ও গণকবর।
মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিবিজড়িত
স্থাপনসমূহ সংরক্ষণ করা খুবই
জরুরি ছিল। আমরা চাই না
মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার নীরব
সাক্ষী এই বধ্যভূমিগুলো
অযত্ন, অবহেলায় বিলীন
হয়ে যাক। আমরা চাই, এগুলো
সংরক্ষণ করা হোক।
স্বাধীনতার পর থেকেই
চলে আসছে বুদ্ধিজীবী
হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি। কিন্তু
স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি
অধিকাংশ সময় ক্ষমতার
কেন্দ্রবিন্দুতে থাকায়
এতদিনেও তা বাস্তবায়ন করা
সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সাল
থেকে স্বাধীনতার
পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার
পর আবার উচ্চারিত হচ্ছে
সেদিনের সেই বর্বর
হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনকারী
ও বাস্তবায়নকারীদের
বিচারের দাবি। একাত্তরের ২৫
মার্চ ভয়াল কালরাত থেকে শুরু
করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত
দেশের নিরীহ
জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মম
অত্যাচার চালায় পাকহানাদর এবং
তাদের এ দেশীয়
দোসররা। ১৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশের বিজয়ের পরপর
আত্মগোপন করে
স্বাধীনতাবিরোধীরা।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তৈরি করা
হয় এদেশের মুক্তমনা,
চিন্তাশীল ব্যক্তিদের তালিকা।
২৫ মার্চ থেকেই চলতে
থাকে বুদ্ধিজীবী হত্যা।
কিন্তু ডিসেম্বর মাসে তা
ব্যাপক রূপ নেয়।
পাকিস্তান সরকার ১৪
ডিসেম্বরের আগেই
আত্মস মর্পণের সিদ্ধান্ত
নেয়। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে
দেয়া হয় জেনারেল
নিয়াজিকে। তারপরই দ্রুত
বুদ্ধিজীবী নিধন শুরু করে
তাদের এদেশীয়
সহযোগী বাহিনী।
স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষে জানা
যায়, ১৪ ডিসেম্বর এক রাতেই
স্বনামখ্যাত অনেক
বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাসা
থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা
করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর
হয়ে রাজাকার, আলবদর,
আলশামস, শান্তিবাহিনীর
দেশীয় দালালরা শিল্পী,
সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক,
পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-
পেশার বুদ্ধিজীবীদের
ধরে নিয়ে হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবীদের নদী-নালা,
পুকুর, ডোবা, ময়লার
জঞ্জালসহ বিভিন্ন স্থানে
নিয়ে হাত-পা,মুখ-চোখ
বেঁধে,গুলি করে, বেয়নেট
দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। ১৬
ডিসেম্বর স্বাধীনতার পর
নৃশংস এই হত্যার কথা জানতে
পারে দেশবাসী। সেই
থেকে প্রতি বছর ১৪
ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে
দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী
দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
জাতি আজ শোক, শ্রদ্ধার মধ্য
দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই
শ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তানদের
স্মরণ করবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক