করে দিবে

করে দিবে

প্রথম দেখায় বিরক্তিকর ছেলেটিই যখন ভালোবাসার মানুষ, গল্পটি যতবার পড়বেন মন ভালো করে দিবে
https://mobile.facebook.com/alamgir.rahman.9847
https://papry99.blogspot.com/

আচ্ছা, এমন কখনো কি হয়েছে, প্রথম দেখাতে একজনকে আপনার খুব বিরক্ত লেগেছে। কথাই বলতে ইচ্ছা হয়নি। খুব অনিচ্ছায় অপর পক্ষের আগ্রহের জন্যে করতে হয়েছে বন্ধুত্ব। কোনদিনও ভাবতে পারেননি, সেই বিরক্তিকর মানুষটাই আপনার জীবনের সবকিছু হয়ে উঠবে! কিন্তু আপনার সকল ভালোবাসা, আপনার ভালোলাগা, আপনার স্বপ্ন, আপনার সকল অভিমানগুলো একটা সময়ে এসে সেই মানুষটার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলো! সে হয়ে গেলো আপনার জীবনসঙ্গী! খুব সিন্যাম্যাটিক মনে হচ্ছে? তবে পড়ে নিন লোপা-তুহিন জুটির ভালোবাসার দারুন এই গল্পটি।

তুহিন লোপা ১

তাদের প্রথম দেখা জানুয়ারি ২০১০ ইউনিভার্সিটির ক্লাসে। তুহিন প্রথমে লোপাকে দেখেছিলেন। সে প্রতি ক্লাসে লোপার পেছনে বসতেন, লোপা কিন্তু কখনোই খেয়াল করেননি বিষয়টি। হুট করে একদিন লোপাকে ডেকে তুহিন বলেন তার কথা আছে, ক্লাস শেষে অপেক্ষা করতে! লোপা ব্যপারটা খুব একটা পাত্তা দেননি বলে তার মনে ছিল না। ক্লাস শেষে সে যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন তুহিন আবার ডাক দিয়ে লোপাকে থামান। জানান যে লোপার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান তিনি। লোপা বুদ্ধি করে তার ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে তুহিনকে বলেন, তার সকল ফ্রেন্ডরা তুহিনের সাথে বন্ধুত্ব করলে তিনিও করবেন। এবং সেদিন লোপাসহ সকলের সাথেই তুহিনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তবে প্রথম দিনেই কিন্তু লোপার মোবাইল নাম্বারটা তুহিনের কপালে মেলেনি।

এরপর ভার্সিটি দেখা হত, টুকটাক কথা হত। ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুদের মধ্যে লোপা ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। তার অনেক বন্ধুরাই তাকে পছন্দ করতেন। কিন্তু লোপা তার নিজের মতে অটল ছিলেন- বাবা-মায়ের পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করব, কোন প্রেম করব না! তুহিন ছিলেন লাজুক এবং চুপচাপ ধরনের। বুক ফাটে তবে মুখ ফোটে না। এর মধ্যে পরীক্ষার বিষয়ে কিছু দরকারি কথা বলতে লোপা কল দেন তুহিনকে। সেদিনই প্রথম তুহিন লোপার নাম্বার পান।

এরপর তাদের মধ্যে কথা হতে থাকে। লোপা বুঝতে পারেন যে তুহিন তার উপর দুর্বল, কিন্তু তুহিন এই ব্যপারটা কখনই সরাসরি বুঝতে দিতেন না। প্রায়শই তুহিন লোপার সাথে বাইরে দেখা করতে চেয়েছেন, লোপাকে বাসাতে নামিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু লোপা রাজি হননি কখনোই। কিন্তু তাদের মধ্যে কথা আর গল্প চলতে থাকে।

এর মাঝে তুহিন কিছু কাজে গ্রামের বাড়িতে যান। এই দুই দিনে কোন যোগাযোগ হয়নি লোপার সাথে তুহিনের। তখনই প্রথম লোপা বুঝতে পারেন, শুধু তুহিন লোপাকে পছন্দ করেন তাই নয়, তিনি নিজেও পছন্দ করে ফেলেছেন তুহিনকে!

“ভালোবাসি” শব্দটা ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রথম শোনার ঘটনাটি কি আপনার মনে আছে? বহু আকাঙ্ক্ষিত এই শব্দটা যখন আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনাকে বলেছিল তখন আপনি কতটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন? কিভাবে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে প্রথম শুনতে পেলেন ‘ভালোবাসি’ সেটা রোমহন্থন করেছিলেন লোপা।

তাদের এক বন্ধুর জন্মদিনে বোতল ঘোরানো খেলার মাধ্যমে প্রথমে তুহিন লোপাকে প্রশ্ন করেন কাউকে ভালোবাসেন কিনা তিনি! দ্বিধায় থাকা লোপা না বলে দেন তখন। এরপর তুহিনের পালা আসলে তিনি জানান, তিনি ‘তারা’ নামের একজনকে ভালোবাসেন। এই কথা শুনে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে লোপা সেখান থেকে উঠে চলে যান। এরপর তুহিন মেসেজ দিয়ে জানান, গতকাল রাতে তিনি লোপাকে একটা নাম দিয়েছিলেন, আকাশের দুইটা তারার একটা তারা লোপা! এরপর সরাসরি কল দিয়েই তুহিন লোপাকে বাংলায় বলেন, “ভালোবাসি”!
https://mobile.facebook.com/alamgir.rahman.9847


https://papry99.blogspot.com/

তুহিন লোপা

সেই থেকে শুরু। দিনটা ছিল ৩রা মার্চ, ২০১০। তাদের এই এতোদিনের সম্পর্কের চলার পথটা খুব একটা সহজ ছিল না। অনেক চড়ায় উৎরায় ছিল। ছিল অনেক মান-অভিমান। একদিকে তুহিন খুবই চুপচাপ এবং বাস্তববাদী ধরনের মানুষ। অন্যদিকে লোপা খুবই আবেগপ্রবণ মানুষ। এই কারনে প্রায়ই তাদের মধ্যে তৈরি হত ভুল বোঝাবুঝি। তবে তারা দুই জনেই একটা ব্যপার জানতেন। যতই রাগ, অভিমান, ঝগড়া অথবা সমস্যা থাকুক না কেন নিজেদের মধ্যে, একে অন্যকে ছাড়া কেওই থাকতে পারবেন না।

সম্পর্ক তো শুরু হলো। কিন্তু এরপরের ঝড়ঝাপটা, নানা বাঁধা, প্রতিকূলতা কিভাবে পাড়ি দিয়েছিলেন তারা? তাদের সম্পর্কের এক বছরের মধ্যেই দুই পরিবারের মধ্যেই জানাজানি হয়ে যায় লোপা-তুহিনের সম্পর্কের কথা। তুহিনের পরিবার থেকে অসম্মতি না থাকলেও লোপার পরিবার কোনমতেই এই সম্পর্ক মেনে নিতে তৈরি নয়। বহু মানা, বাঁধা পার হয়ে দুইজনে একসাথে স্নাতক পাশ করেন ২০১৪ সালে।তুহিন লোপা

পাশ করার পরে তুহিন এবং তার পরিবার চাচ্ছিলেন তুহিনকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে। তাই তিনি তার বাসায় সকলের সাথে কথা বলে বুঝিয়ে লোপাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু ছেলে তো মাত্র স্নাতক পাশ। এখনও চাকরি পাননি। লোপার পরিবার থেকে সরাসরি মানা করে দেওয়া হয় এই প্রস্তাব। এর মাঝে দুই পরিবারের মধ্যে তৈরি হয় কিছু মনোমালিন্য। যার ফলে তাদের সম্পর্কের ব্যপারে যে ১% আশা ছিল সেটাও নষ্ট হয়ে যায়!

এই সময়টা ছিল দুইজনের জন্যে সবচেয়ে কঠিন এবং কষ্টকর সময়। তুহিন এবং লোপা জানতেন, তারা দুইজন দুইজনকে ছাড়া কোনভাবেই থাকতে পারবেন না। তাই তারা দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে দুইজনে তাদের সম্পর্কের ব্যপারে একদম চুপ হয়ে যাবেন। কেওই কারোর পরিবারের সাথে আর কোন কথা বাড়াবেন না নিজেদের সম্পর্কের ব্যপারে। এর মধ্যে দুইজনের একই সাথে আলাদা প্রতিষ্ঠানে চাকরি হয়ে যায়। তার কিছুদিন পরে একসাথে এমবিএ শুরু করেন। তারা দুইজনে দুইজনের ভরসা হয়ে দুই বছর চুপচাপ থেকেছেন একদম পাথরের মতো। দুই পরিবারের মধ্যে এই সম্পর্ক নিয়ে কোন কথা না হলেও, তাদের মধ্যকার সম্পর্কে এবং ভালোবাসার মধ্যে কোন বদল আসেনি।

টানা দুই বছর পর একদিন কথায় কথায় লোপা সুযোগ পেয়ে যান তুহিনের ব্যপারে আবারো কথা বলতে। সাহস করে তিনি তার মা এবং বাবাকে শান্ত মাথায় সবকিছু বুঝিয়ে বলেন। এরপর বরফ গলতে শুরু করে। তুহিনও তার পরিবারের সাথে কথা বলে এবং তারা আবারো বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় লোপার বাসাতে। ৫ই আগস্ট, ২০১৬ তে তুহিনের পরিবার থেকে লোপাকে দেখতে আসে এবং সেদিনই তাদের বাগদান হয়ে যায়। তার দুই দিন পরে বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়ে যায় তাদের।

তুহিন লোপা ৬

এরপর ঠিক পঁচিশ দিনের মধ্যে এতো বছরের এতো সাধনা, এতো প্রতিকূল অবস্থা পাড়ি দেওয়া এই সম্পর্কটা পরিপূর্ণ রূপ পায়। অনেক আয়োজন করে, দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের দুইজনের বিয়ে হয়। তাদের দুইজনেরই স্বপ্নের বিয়ে! সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে কখনোই তাদের মধ্যে সারারাত ধরে কথা হয়নি। কিন্তু বিয়ের আগের তিন-চার রাত তারা সারারাত ধরে কথা বলেছিলেন সেই প্রথম।

তুহিন লোপা ৭

বিয়ে পড়ানোর পর লোপা যখন প্রথম একে অন্যকে দেখছিলেন, তখনও ভাবছিলেন, ‘সত্যি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে!’ এ যেন এক অবশ্বাস্য ঘটনা!

সম্পর্কের শুরু থেকেই তারা একে অন্যের বন্ধু ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে তারা যেন আরো বেশী ঘনিষ্ঠ আর ভালো বন্ধু হয়ে উঠলেন। তাদের সম্পর্কটার মধ্যে যেমন অনেক ভালোবাসা আছে, আবার ঝগড়াও আছে। তবে ভালোবাসার পরিমাণটা দুজনের প্রতিই দু’দিক থেকেই খুব বেশী। এখনও তারা একে অন্যকে ছাড়া কোন কিছু খাননা, এখনো প্রতিদিন একসাথে অফিসে যাওয়ার আগে মন খারাপ করে বিদায় নেন দুজনে। লোপা’র কাছে তুহিন একইসাথে পৃথিবীর সবচেয়ে জেদী, রাগী, অভিমানী, দায়িত্ববান, বাস্তববাদী, যত্নশীল এবং সহজ সরল মনের একজন মানুষ।

তুহিন লোপা ৯

চলার পথে সমস্যা থাকে, মানা থাকে, থাকে হাজার বিপত্তি। কিন্তু ভালোবাসার দুজন মানুষ যখন একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত হন, যত্নশীল হন, একে অন্যের ভরসা হন- তবে যেকোন বাঁধা এসে মাথা নত করতে বাধ্য! দরকার শুধু, সবটুকু সময়ে একে অন্যের হাত ধরে একসাথে থাকা।
https://mobile.facebook.com/alamgir.rahman.9847


https://papry99.blogspot.com/