শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত হয়
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এটি ঢাকার মীরপুরে
অবস্থিত। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি মোস্তফা হালি কুদ্দুস ।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি
সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর
সহায়তায় বাংলাদেশের বহুসংখ্যক
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তাদেরকে
মিরপুর এলাকায় ফেলে রাখে। সেই সকল
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে সেই স্থানে
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। এ সকল
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার রায়েরবাজার
বধ্যভূমিতে নাম জানা ও অজানা বুদ্ধিজীবীদের
সম্মানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শহীদ
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। স্থপতি মো. জামী-আল
সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদের নকশায় নির্মিত
এ স্মৃতিসৌধ ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বাংলাদেশ
ডাকবিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক
ডাকটিকিটের সিরিজ বের করেছে।
২৫ মার্চ ১৯৭১ কলো রাতেই শুরু হয়
বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞ কার্যক্রম।
পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে
বেশীসংখ্যক বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়েছিল।
তাই, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন
আহমেদ এইদিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’
ঘোষণা করেন। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত
‘শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’(১৯৯৪)
থেকে জানা যায়, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবী শহীদ
হয়েছেন। তবে তালিকায় অসম্পূর্ণতার কথা ওই
গ্রন্থেই স্বীকার করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের
ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে
বেসরকারীভাবে গঠিত বুদ্ধিজীবী নিধন
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
এরপর “বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি” গঠিত হয়। এই
কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাও
ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০
বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা
করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো
হত্যাযজ্ঞ চলেনি। কারণ ফরমান আলীর লক্ষ্য
ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর
হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে মেরে
ফেলা। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির
রায়হান বলেছিলেন, এরা নির্ভুলভাবে
বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনষ্ক
বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত
হেনেছে। উল্লেখ্য,ওই কমিশনের আহবায়ক
ছিলেন চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, যিনি নিখোঁজ হন
১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দিন আহমেদ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের
সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর।
কিন্ত,তার ঔ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। “আর একটা
সপ্তাহ গেলেই ওরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের
সবাইকেই মেরে ফেলত- আল বদর বাহিনীর
মাস্টার প্ল্যান”---- ‘দৈনিক আজাদ ১৯৭১ সালের ২৭
ডিসেম্বর ’ সেখানে লেখা হয়েছিল:
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার সাহায্যকারী
দলগুলির মধ্যে জামাতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল
সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্য। মওদুদী-গোলাম
আযম-আবদুর রহীমের নেতৃত্বে পরিচালিত
জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু
ঘোর বিরোধিতাই করেনি- লক্ষ লক্ষ
বাঙালীকে পাইকারীভাবে হত্যা করার কাজে
সক্রিয় সহযোগিতাও করেছে। এরাই আর একটা
সপ্তাহ গেলেই ওরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের
সবাইকেই মেরে ফেলত। এদের সাথে
প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ
(বর্তমান ছাত্র শিবির)। একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাক
বাহিনী ও জামাত এ ইসলামীর নেতৃত্বাধীন
ক্যাডারগ্রুপ বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের
হোতা । আল বদর বাহিনীর যে দুইজন
জল্লাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন - চৌধুরী
মাইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান। বুদ্ধিজীবী নিধন
তদন্ত কমিশন ১৯৭১ প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ
হোসইনের কর্তৃক প্রণিত একটি দলিল পায় বলে
জানা যায়। বুদ্ধিজীবীর হত্যায় যারা ঘৃণ্য ভূমিকা
রাখে তাদের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী পাকি
অফিসার ব্রিগে. রাজা, ব্রিগে আসলাম, ক্যাপ্টেন
তারেক, কর্ণেল তাজ, কর্ণেল তাহের, ভিসি
প্রফেসর ডঃ সৈয়দ সাজ্জাদ হোসইন, ডঃ মোহর
আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার,
আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিন এদের
নেতৃত্ব দেয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান
আলী। ১১ ডিসেম্বর থেকে আল-বদর বাহিনী
ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার
বাস্তবায়ন শুরু করে। জামাত দাবী করে যে, এ
নিধনযজ্ঞে তাদের কোন অংশগ্রহণ ছিল না,
পরবর্তীতে এগুলোর সাথে তাদের নাম
লাগানো হয়েছে। কিন্তু সে সময়ের
পত্রিকাগুলো ভিন্ন কথা বলে। বুদ্ধিজীবী ও
শিক্ষকদের অনেককেই যে “ইসলামী ছাত্র
সংঘ”-এর পুরানা পল্টন (১৫ পুরানা পল্টন) অফিসে এবং
জামাতের মোহাম্মদপুর অফিসে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিল, সেকথা আমরা ডিসেম্বরের পত্রিকা
থেকেই জানতে পারি।
বুদ্ধিজীবী হত্যামামলার নথিপত্রের কোনো
হদিস নেই রাজনৈতিক আমলাতান্ত্রিক কারণে ৬ বছর
ধরে ঝুলে রয়েছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ
আইনে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলাটি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০০২
সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রস্তাবনা
দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে
সে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়নি। পরে
মামলার নথিটিও উধাও করে দিয়েছে তৎকালীন
জোট সরকার। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি-
জামায়াত জোট সরকার পরিকল্পিত ভাবে মামলাটিকে
ধ্বংস করেছে। সিআইডি’র সূত্র জানিয়েছে তারা
বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছেন। সেখান
থেকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ দমন আইনে
মামলা দায়েরের কোনো অনুমতি পাননি। তিনি
জানান, ১৯৯৭ সালে দায়ের করা বুদ্ধিজীবী হত্যা
মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণ্মলয়ের অনুমতিক্রমে
ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কীভাবে
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে মামলা দায়ের করা
যায়, সে ব্যপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের
লিখিত প্রস্তাবনা চেয়েছিল। প্রস্তাবনা দেওয়ার
পর সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া
মেলেনি। স্বাধীনতার ২৫ বছর পর আওয়ামী
লীগ সরকারের শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২৪
সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় রমনা
থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর ১৫)।
ওই হত্যা মামলায় আলবদর বাহিনীর চৌধুরী
মাইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়।
মামলাটি দায়ের করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী
অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু। মামলাটি
সিআইডিতে পাঠানোর পর তদন্তের দায়িত্ব
দেওয়া হয় সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এএসপি
মুন্সী আতিকুর রহমানকে (বর্তমানে অবসরে)।
তিনি মামলার তদন্ত পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের ১৮
জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুদ্ধাপরাধ আইনে
মামলা দায়েরের জন্য অনুমতি চান। তদন্ত
চলাকালে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের
আত্মীয়সজনদের ৪০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ
সংগ্রহ করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আন্তর্জাতিক আইনে মামলাটি নতুন করে
দায়েরের জন্য সিআইডিকে প্রস্ততি নেওয়ার
নির্দেশ দেয়। সিআইডি সূত্র জানায়, ওই আইনে
মামলা দায়ের করার জন্য রমনা থানার মামলাটিতে
চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতক যুদ্ধাপরাধ
আইনে অনুমতি চেয়ে পুরো প্রক্রিয়া জানিয়ে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০০২ সালে পুর্ণাঙ্গ
প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবনা বলা হয়,
কলাবরেটর অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রচলিত
আইনে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলায় বিচার পাওয়ার
সম্ভবনা কম। কিন্তু ১৯৭৩ সালের প্রণীত
আর্ন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে এর বিচার সম্ভব।
এ আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
গঠনের বিধানও রয়েছে। তবে এই আইনটি
কার্যকর করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের
প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারি
করলেই ওই আইনে মামলা দায়ের সম্ভব। সূত্র
জানায়, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আর
কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্ত
মামলাটির কাগজপত্র কোথায় কী অবস্থায় আছে
সে ব্যাপারেও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন
করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে মামলার তদন্তকারী
কর্মকর্তার কাছে থাকা কাগজপত্র সিআইডির
তৎকালীন অ্যাডিশনাল আইজি নিয়ে যান। সে
কাগজপত্রেরও কোনো হদিস নেই। দেশ
স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগ মূহূর্তে হানাদারদের
এদেশীয় দোসর আলবদর বাহিনী দেশের
শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
রমনা থানায় দায়ের করা বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার
বাদী ফরিদা বানু বর্ণনা দিয়েছেন সে
হত্যাকান্ডের। তিনি এজাহারে বলেছেন, তার ভাই
গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ও মুহসীন হলের
হাউস টিউটর ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঘাতকরা
মুহসীন হল সংলগ্ন বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে
হলের দিকে যায়। হলের সামনে তাকে
পেয়ে দারোয়ান আবদুর রহিমের গামছা নিয়ে
চোখ বেঁধে ইপিআরটিসির একটি মাইক্রোবাস
যোগে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফিরে
আসেননি। ঘাতকরা অন্যান্য হাউস টিউটরের বাসায়ও
যায়। এ সময় ওই হলের ছাত্র ছিলেন বাংলা
একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ
আনোয়ার হোসেন। তিনি পুরো ঘটনা প্রত্যক্ষ
করেন। পরে তারা জানতে পারেন গিয়াসউদ্দিন
আহমেদ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
মধ্যে ড. মোঃ মুর্তজা, ড. আবুল খায়ের,
অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা,
অধ্যাপক সিরাজুল হক ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্যসহ
আরো অনেককে ধরে নিয়ে গেছে
আলবদররা। শহীদ বুদ্ধিজীবী মোঃ মুর্তজার
ও সিরাজুল হকের ছেলে এনামুল হক
অপহরণকারীদের দু’জনকে চিনতে পারেন।
তারা হলেন চৌধুরী মাইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান।
দু’জনই তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের
মধ্যে আশরাফুজ্জামান তৎকালীন অবজারভার
পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার
পর ১৮ ডিসেম্বর ফরিদা বানু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা
ছেড়ে আজিমপুরে ভাড়া বাসায় চলে যান। ১৯৭২
সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল মর্গে তিনি তার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে
ড. মুর্তজা, ড. আবুল খায়ের ও ড. সন্তোষ
ভট্টাচার্যসহ অনেক বুদ্ধিজীবীর গলিত লাশ
দেখতে পান। ৫ জানুয়ারি মিরপুরের বর্তমান
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কাছে গিয়ে
তার ভাই গিয়াসউদ্দিন আহমেদের গলিত লাশ পান।
লুঙ্গি ও জামা দেখে ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন
তিনি। বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি
চৌধুরী মাইনুদ্দীন লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান
নিউইয়র্ক প্রবাসী। তাদের দেশে ফিরিয়ে
আনারও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শহীদ শিক্ষাবিদ
(বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) ও
আইনজীবীদের
জেলাওয়ারী তালিকা[৫]
জেলা ও
বিভাগ
শিক্ষাবিদ আই প্রাথমিক মাধ্যমিক কলেজ
ঢাকা ৩৭ ৮ ১০ ৬
ফরিদপুর ২৭ ১২ ৪ ৩
টাঙ্গাইল ২০ ৭ ২
ময়মনসিংহ ৪৬ ২৮ ১ ২
ঢাকা বিভাগ ১৩০ ৫৫ ১৭
চট্টগ্রাম ৩৯ ১৬ ৭ ১
পার্বত্য
চট্টগ্রাম ৯ ৪ ১ ১
সিলেট ১৯ ৭ ২
কুমিল্লা ৪৫ ৩৩ ১ ৪
নোয়াখালী ২৬ ১৩ ৪ ২
চট্টগ্রাম
বিভাগ ১৩৮ ৭৩ ১৩
খুলনা ৪৮ ১৫ ২ ২
যশোর ৫৫ ৩১ ৫ ৪
বরিশাল ৫০ ২১ ৪
পটুয়াখালী ৩ ১
কুষ্টিয়া ২৮ ১৩ ৪
খুলনা বিভাগ ১৮৪ ৮১ ১৫
রাজশাহী ৩৯ ৮ ৩ ৫
রংপুর ৪১ ২২ ৯ ৪
দিনাজপুর ৫০ ১০ ১ ২
বগুড়া ১৪ ১২ ২
পাবনা ৪৩ ৯ ১ ২
রাজশাহী
বিভাগ ১৮৭ ৬১ ১৪
বাংলাদেশ ৬৩৯ ২৭০ ৫৯
শহীদ শিক্ষাবিদের (বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) মোট সং
৯৬৮
শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা = ২১
শহীদ শিক্ষাবিদের মোট সংখ্যা = ৯৮৯

বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স / kobirajhat24.net

বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন রংপুর

রাইডার্স


 / kobirajhat24.net
বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন রংপুর
রাইডার্স


kobirajhat24.net
papry99.blogspot.com
ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৫৭ রানে হারিয়ে
প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা
জিতেছে রংপুর রাইডার্স। অবশ্য এমনও বলা
যায়, মহারণে ঢাকাকে হারিয়েছেন ক্রিস
গেইল!

ফাইনাল ম্যাচ চলাকালে রংপুর রাইডার্সের
উদযাপনের দৃশ্য। ছবিঃ বিডিক্রিকটাইম
ক্রিস গেইলে প্রতিপক্ষের ভয়টা ছিল
আগে থেকেই। যে রংপুর আসরের
শুরুতে ধুঁকছিল, তারাই খোলস পাল্টে
ফেলল গেইলের আবির্ভাবের পরপর।
ম্যাচের মোড় যেমনি ঘুরাতে পারে একটি
শট কিংবা একটি ডেলিভারি, তেমনি ক্রিস গেইল
মোড় ঘোরালেন পুরো
টুর্নামেন্টেরই। 
রীতিমতো খাদের কিনারা
থেকে রংপুর রাইডার্সকে তুললেন শীর্ষ
চারে, পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ দল
করে। দু-দু’টি কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলে মাটি
কামড়ে নিশ্চিত হল ফাইনাল। টানা তিন দিন মাঠে
নামার বিরল পেশাদারিত্বের প্রমাণের সাথে
সমর্থকদের চাপ আর প্রতিপক্ষের দর্শক
ঠাসা গ্যালারি- সবকিছুকে হারিয়ে ক্রিস গেইল
একাই চ্যাম্পিয়ন করলেন রংপুর রাইডার্সকে।
ঢাকার মাটিতে রান পায় না বিপিএল-
ক্রিকেটপ্রেমীদের এমন অনুযোগ
যেন শুনতে পেলেন ক্রিকেট দেবতা।
আর তাই শেষ চারের মঞ্চে রান ফোয়ারা
কাকে বলে এবং তা কত উপায়ে দেখা
যেতে পারে- সম্ভাব্য সব উপায়ই দর্শন
করাল ক্রিকেট দেবতার রসিকতা। অবশ্য
এক্ষেত্রে রসিক ক্রিকেট দেবতার
কৃতিত্বকে খাটো করে দেখতেও
পারেন ক্রিস গেইল। একপেশে ফাইনালে
বলার মতো মারকুটে ব্যাটিং যে
দেখিয়েছেন একমাত্র তিনিই!

Also Read - রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ছক্কার
শতক ছুঁলেন গেইল

টস জিতে ফিল্ডিং। গুঞ্জনের শুরু তখনই- ভুল
সিদ্ধান্ত নিলেন না তো সাকিব আল হাসান?
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনসন
চার্লসকে ব্যক্তিগত ৩ এবং দলীয় ৫ রানে
ফিরিয়ে সাকিব নিজেই জানালেন, ভুল নয় তার
সিদ্ধান্ত। তবে তার সেই জানানোতেই
যে ছিল খাদ, সেটি কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে
দিয়েছেন টি-২০ ফরম্যাটের সবচেয়ে
আবেদনময়ী ব্যাটের মালিকদ্বয় ক্রিস
গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
ধীর-স্থির শুরু। একপ্রান্ত আগলে রাখলেন
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ক্রিস গেইল তখনও
ছন্দ খুঁজে পাননি। ঢাকার বোলাররা ইনিংসের
প্রায় অর্ধেক ওভার পর্যন্ত ম্যাচ রাখলেন
তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে এর পরই শুরু
‘গেইল শো’! বলকে সীমানা ছাড়া
করছিলেন দৃষ্টিনন্দন সব শট হাঁকিয়ে। তাও
শটগুলোর যেন আবার চারের চেয়ে
ছক্কায় পরিণত হতেই স্বাচ্ছন্দ্য বেশি!
শেষমেশ গেইল আর ম্যাককালাম মাঠ
ছেড়েছেন অপরাজিত থেকেই। তার
আগে ৬৯ বল মোকাবেলা করে ১৪৬
রানের (১৮ ছক্কা, ৫ চার) ইনিংস
খেলেছেন গেইল, যে ইনিংস খেলার
পথে ছুঁয়েছেন বিপিএলের ছক্কার শতক,
ইনিংসে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ছক্কার
রেকর্ড এবং সবচেয়ে বেশিবার ইনিংসে
দশটিরও বেশি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি।
সেই সাথে বিপিএলের হাজারী ক্লাবেও
টুক করে ঢুকে পড়েছেন ইতিহাসের
প্রথম বিদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৪৩
বলে ৫১ রানের ৩ ছক্কা, ৪ চার কার্যকরী
কিন্তু স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস খেলে ম্যাককালাম
যেন ছিলেন গেইলের ছায়া হয়ে।
২০৭ রানের লক্ষ্য পূরণ যেকোনো
দলের জন্যই বেশ কঠিন, বিশেষ করে
ম্যাচটি যখন শিরোপা নির্ধারণী। খরুচে
বোলিংয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ
ছিল ব্যাট হাতে। তবে ঢাকার টপ অর্ডার
ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ সেখানেও।
স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ
হওয়ার আগেই মাশরাফির দুর্দান্ত ডেলিভারি
পায়ে লাগিয়ে সাজঘরে মেহেদী মারুফ।
এভিন লুইস এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন
জো ডেনলিকে, তাতে নিজের প্রথম
শিকার পেয়ে গেলেন সোহাগ গাজী।
দলীয় ১৯ রানের এভিন লুইসকে গাজীর
বলে তালুবন্দী করলেন অধিনায়ক মাশরাফি;
আর দলীয় ২৯ রানে কাইরন পোলার্ডকে
তালুবন্দী করেন গেইল, রুবেল
হোসেনের বলে।

৪.৪ ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে
ঢাকা তখন দিশেহারা। তবে এতো সহজে
হাল ছাড়ার পাত্র নন সাকিব! ক্রিজে নেমে
দলের হাল ধরলেন জহুরুল ইসলামকে
সঙ্গী করে। তবে ১৬ বলে ২৬ রান
করে সাকিব সাজঘরে ফিরলে সে যাত্রায়
রতিরধ ভাঙে। সাকিবের বিদায়ের পর আউট
হন মোসাদ্দেক হোসেন ও শহীদ
আফ্রিদিও। সুনীল নারাইনকে সঙ্গে নিয়ে
শেষদিকে সম্মানজনক সংগ্রহের চেষ্টা
করে যাচ্ছিলেন জহুরুল ইসলাম। তবে
তাতে শুধু নিজের হাফ-সেঞ্চুরিটাই
পেয়েছেন জহুরুল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯
উইকেট হারিয়ে শিরোপা খোয়ানো
দলটির সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৯।
আর এতে ৫৭ রানের জয় পেয়ে
প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপার
স্বাদ পায় রংপুর রাইডার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
রংপুর রাইডার্স– ২০৬/১ (২০ ওভার) (গেইল
১৪৬*, ম্যাককালাম ৫১*; সাকিব ২৬/১)
ঢাকা ডায়নামাইটস – ১৪৯/৯ (২০ ওভার) (জহুরুল
৫০, সাকিব ২৬; নাজমুল ৮/২, উদানা ২৫/২)
ফল- রংপুর রাইডার্স ৫৭ রানের ব্যবধানে
জিতে শিরোপাজয়ী।
ম্যাচসেরা ঃ ক্রিস গেইল
আরও পড়ুনঃ রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি ছক্কার
শতক ছুঁলেন গেইল